নিজস্ব প্রতিবেদন: আরও বেশি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছে ভারত। গত বছরের থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হতে চলেছে করোনা ভ্যাকসিন। এমনিতেই ব্রিটেনে ছেয়ে গিয়েছে করোনার নয়া স্ট্রেন। যার প্রভাব পড়েছে ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে। ভারতেও করোনার নয়া স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। করোনা সংক্রান্ত নয়া বিধি – নিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্র। যদিও এরমধ্যেও স্বস্তির খবর হল, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ভারতে তৈরী ভ্যাকসিনগুলি করোনার নয়া স্ট্রেনকেও কাবু করতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই ভারতে কো-ভ্যাকসিনের ড্ৰাই রান শেষ করে দেশবাসীর হাতে আসতে শুরু হয়ে গিয়েছে ভ্যাকসিন। কেন্দ্র আগেই জানিয়েছিল, এই ভ্যাকসিন প্রথম দেওয়া হবে করোনা আবহে প্রথম শ্রেণীর মানুষদের, সাথে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাতেও তুলে দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন। অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে প্রথম দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন, তারপর বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যাবে এই করোনা ভ্যাকসিন। এরমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে এসে পৌঁছে গিয়েছে এই ভ্যাকসিন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও এসেছে এই করোনা প্রতিষেধক। তবে এই ভ্যাকসিন মানুষকে কতটা করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখবে, তা নিয়ে চিন্তায় বহু সাধারণ মানুষ।
এরমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয় বছর আরও বেশি ভয়ানক হতে পারে। ২০২০ পেরিয়ে যখন আশার আলোর সন্ধানে বিশ্ববাসী, তখনই এমন আশঙ্কার কথা শোনাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-এর স্বাস্থ্য জরুরি ব্যবস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল রায়ান জানান, প্রথম বছরের তুলনায় দ্বিতীয় বছর আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে মারণ করোনা ভাইরাস। সাংবাদিক বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পর্বে রায়ান বলেন, “আমরা ভাইরাসের দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছি। এই সময় ভাইরাসের গঠনগত পরিবর্তন হচ্ছে। যা থেকে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছর ১১ মার্চ মহামারী পরিস্থিতি ঘোষণা করে। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ৯২ কোটির বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃ্ত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে একাধিক দেশে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করেছে, টিকাকরণ হলেও হার্ড ইমিউনিটি বা অনাক্রমতা তৈরি হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, ভ্যাকসিন বাজারে এলেও এখনই অনাক্রমতা তৈরি হবে না। তাই সকলকেই মানতে হবে করোনাবিধিও।
বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, “২০২১ সালে জনসংখ্যাগত ভাবে অনাক্রমতা বা কঠোর অনাক্রমতা তৈরি হবে না। তাই করোনাবিধি মেনে চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব, হাত ধোওয়া, মাস্ক পরতে হবে।’’ দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে সতর্ক হতে বলেছেন তিনি। কিন্তু অনেকেই মনেই এই টিকাকরণ সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। আবার এই করোনা ভাইরাসের গঠনগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। তাই এই অবস্থায় টিকাকরণ হলেও অনাক্রমতা বা হার্ড ইমিউনিটি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এদিকে আমেরিকা, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে গণ টিকাকরণ। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি মূলত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, বায়োএনটেক-ফাইজার, মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এখনই আশ্বস্ত হতে পারছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কথা মতো ১৩ জানুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে টিকাকরণ শুরু হয়েছে। তবে এখনও সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে, এই ভ্যাকসিন সকলের কাছে পৌঁছবে কিনা! প্রথম দফায় ৩০ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ তৈরি হবে। প্রথম পর্যায়ে ৩০ কোটি ভারতবাসীকে দু’টি করে টিকার ডোজ দেওয়া হবে। কিন্তু ন্যূনতম ১০ শতাংশ অপচয় হিসেব করলে অবিলম্বে ভারত সরকারের ৬৬ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োজন হবে৷