তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর : দীর্ঘ ২০ বছর পর অবশেষে স্বস্তি পেল ডেবরাবাসি।
দীর্ঘ দু দশকের ও বেশি সময় ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের প্রায় ৫ লক্ষ বাসিন্দাদের দাবি ছিল,যে লোয়াদাতে কংসাবতী নদীর ওপর একটি স্থায়ী কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জন্য। প্রায় দুই দশক আগে বাম জামানায় সেতু নির্মাণের কাজ শুরুও হয়েছিল।
গত ২০০২ সালে থেকে ২০০৭ সালে নদীর উপরের সেতুর অংশ তৈরির কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতায় থমকে গিয়েছিল সেতুর সংযোগকারী রাস্তা তৈরির কাজ। ফলে চালু করা যায়নি সেতু। তারপর নদীতে কত জল গড়িয়েছে, বছরের পর বছর নদীর দু কুল ছাপিয়ে জল বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের যন্ত্রণাও। তাঁদের দৈনন্দিন জীবন এই নদীকে ঘিরেই পার করেছে অনেক স্মৃতি। বর্ষাকাল এলেই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ আটকে যেতেন নদীর দুই তীরে। ফলে ভোগান্তির অন্ত ছিল না। নিত্য প্রয়োজনে বাজার হাট, অফিস কাছারি, এমনকি প্রধান শহর ডেবরা বা বালিচকে যাওয়াটাই ছিল সেখানকার মানুষের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ!
নদী পারাপারের তখন একমাত্র ভারসা ছোট ডিঙ্গি জাতীয় নৌকা বা খেয়া। বর্ষার দিনে টইটুম্বুর নদীতে পেরোনো মানেই জীবন হাতে নিয়ে পার হতে হত নদী। পার হতে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণ সংশয়ও ঘটে! অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
অবশেষে সেই যবনিকার অবসান ঘটলো। ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কারিগরী শিক্ষা দফতরের স্বাধীন দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী ড: হুমায়ুন কবীর এই ব্রিজ পরিদর্শন করেন এরপর বৃহস্পতিবার থেকে জনগণের জন্য খুলে দেওয়ার অনুমতি দিলেন তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন আপাতত সাইকেল, মোটরসাইকেল এবং অ্যাম্বুল্যান্সের জরুরি পরিষেবার জন্যই ব্যবহার করা যাবে লোয়াদা সেতু। তবে, আপাতত ভারি গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর ছাড়াও ব্রিজ পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন খড়গপুর মহকুমা শাসক, ডেবরা থানার ওসি সহ স্থানীয় প্রশাসনের অন্যান্য উচ্চপ্রদস্থ আধিকারিক গণ।
মন্ত্রী জানালেন, “আমি মন্ত্রী হওয়ার পর কথা দিয়েছিলাম ১ লা জুলাইয়ের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে সেতু ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে। কারণ বর্ষার মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ হয়। সেই কারণেই, আপাতত সাইকেল, মোটরসাইকেল এবং অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য লোয়াদা সেতু ব্যবহার করা যাবে। তবে, কোনোভাবেই ভারি গাড়ি নয়। আমরা ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন সার্বিক ভাবে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও ফেরি পারাপার ব্যবস্থাও চালু থাকছে।”
অবশ্যই, বর্ষার আগেই মন্ত্রীর আশ্বাস মতো ব্রিজ খুলে দেওয়ায় মুখে হাসি ফুটেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নানা টালবাহানার পর অবশেষে স্বস্তি পেল ডেবরাবাসী।