শান্তনু রায়, পঃ মেদিনীপুর: করোনা আবহ কাটিয়ে মকর সংক্রান্তিতে মেতে উঠেছে সকলে। জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মকর সংক্রান্তিতে উৎসবে মেতে ওঠে সকলেই। যার মধ্যে টুসু একটি বিশেষ উৎসব।
যাকে ভিত্তি করে এবছর আনন্দ উচ্ছাসকে কিছুটা হলেও ভাটা দিয়েছে করোনা। মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে বাজারগুলোতে কেনাকাটার ভিড় যথেষ্ট থাকলেও, মানুষের হাতে অর্থের টান পড়েছে।
দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে করোনা নামক মহামারির কবলে জর্জরিত মানুষজন।বিশেষকরে দিন আনা,দিন খাওয়া পরিবারগুলো। অনেকেই কাজকর্ম হারিয়ে বাড়িতে বসে রয়েছে।
তাই গ্রামীণ বাজার গুলিতে মানুষের ভিড় দেখা গেলেও,বিক্রি আগের তুলনায় অনেকটাই কম এমনই দাবী করছেন দোকানদাররা।
আগের তুলনায় কিছুটা হলেও তুলনামূলকভাবে টুসু প্রতিমার দাম বেড়েছে, তাই অনেকটাই আশাবাদী দোকানদারেরা। তবে লকডাউনের ফলে জিনিষপত্রের দাম অনেকটাই বেড়েছে এর ফলে টুসুতে তার প্রভাব পড়েছে বলে দাবী দোকানদারদের।
তবুও খদ্দেররা বছরে একবার এই পরব বা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কেনাকাটায় ব্যস্ত । এমনই চিত্র দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী এলাকায়। এই টুসু উৎসব বা মকর পরব একটি লোকউৎসব, যা বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিনে শুরু হয় আর শেষ হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর-সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে।
টুসু এক লৌকিক দেবী যাকে কুমারী হিসেবে কল্পনা করা হয়। এই উৎসবে প্রধানত কুমারী মেয়েরা টুসুপূজার প্রধান হিসেবে ব্রতী ও উদ্যোগী হয়ে থাকে। টুসু উৎসব অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত এক মাস ধরে পালিত হয়।
ধানের ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারে পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের কুমারী মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখেন। তারপর তুষের ওপর ধান, কাড়ুলি বাছুরের গোবরের মন্ড, দূর্বা ঘাস, আল চাল, আকন্দ, বাসক ফুল, কাচ ফুল, গাঁদা ফুলের মালা প্রভৃতি রেখে পাত্রটির গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে পাত্রটিকে পিড়ি বা কুলুঙ্গীর ওপর রেখে স্থাপন করা হয়।
পাত্রের এই পুরো ব্যবস্থা প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে টুসু দেবী হিসেবে পূজিতা হন। পৌষ সংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরী রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে নিয়ে যান। সেখানে প্রত্যেক টুসু দল একে অপরের টুসুর প্রতি বক্রোক্তি করে গান করতে করতে দেবী বিসর্জন করে থাকেন।
টুসু বিসর্জনের পরে মেয়েরা নদী বা পুকুরে স্নান করে নতুন বস্ত্র পরেন। ছেলেরা খড়, কাঠ, পাটকাঠি দিয়ে ম্যাড়াঘর বানিয়ে তাতে আগুন লাগান।