কলকাতা: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ৷ রোববার সকাল ১১:৩০ নাগাদ হাসপাতাল কতৃপক্ষ তার মৃত্যুর খবর জানায় ৷ এর আগে তার শরীরের বিভিন্ন অংগপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ একপর্যায়ে ব্রেন ডেথ এ পৌছেছে ৷ এই বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর খবর শুনেই এদিন দুপুর ১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে পৌঁছান ৷ এ সময় পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনা করেন এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন ৷
“মুখ্যমন্ত্রী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন ৷ তিনি লিখেছেন,
বাংলার তথা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তী নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাংলার সকল মানুষের হয়ে আমি আমাদের গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ করছি”।
“তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। যে প্রতিভাবান মানুষদের জন্য বিশ্বের দরবারে আমরা প্রতিনিধিত্ব পেয়েছি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন।
জগত্বরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চোদ্দটি ছবি সহ তিনি দু’শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।”
“তাঁর অভিনীত উল্লেখযােগ্য চলচ্চিত্রগুলি হল অপুর সংসার, চারুলতা, অভিযান, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সােনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, গণদেবতা, ঝিন্দের বন্দী, তিন ভুবনের পারে, ক্ষুধিত পাষাণ, কোনি ইত্যাদি।”
“বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একাধারে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা, পাশাপাশি অসামান্য বাচিক শিল্পী, কবি, লেখক, নাট্যকার এবং নাট্যনির্দেশক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে সারা জীবনের অবদানের জন্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০১৫ সালে টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (হল অফ ফেম) ও ২০১৭ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে।”
“এছাড়াও তিনি তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি টেগাের রত্ন অ্যাওয়ার্ড সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রান্স সরকার শ্রীচট্টোপাধ্যায়কে ২০১৮ সালে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্মান- ‘লিজিয়ন দ্য অনার’- এ ভূষিত করে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার বিশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক ছিল। আমাদের আমন্ত্রণে তিনি বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার গ্রহণ করতে নজরুল মঞ্চে যেমন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, আবার পাশাপাশি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজী ইন্ডাের স্টেডিয়ামে উপস্থিত থেকেছেন।”
“তাঁর সসম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ, আন্তরিক ব্যবহারে তিনি সকল সময়ে আমাদের চিত্ত স্পর্শ করেছেন।
তাঁর মৃত্যু বাংলার জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করল। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার-পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীর
প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।”
বিকেলে প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে রাখা হয় রবীন্দ্রসদনে ৷ সেখানেই মুখ্সমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ৷ তারপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্যে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ৷