তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর:মেদিনীপুর শহরে ফের ভূল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে তীব্র উত্তেজনা ছড়ালো। জানা যায়, মেদিনীপুর শহরের ধর্মা সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন চন্দ্রকোনার বাসিন্দা অরুণ রাণা। হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন ওই ব্যাক্তি। কলকাতায় সুচিকিৎসার পর অনেকটাই সুস্থ হয়ে ছিলেন অরুণ বাবু। এরপর স্বাস্থ্যের কিছুটা অবনতি হওয়ায় প্রথমে তাঁকে ভর্তি করা হয় মেডিক্যাল কলেজে এরপর সু চিকিৎসার জন্য ১৫ দিন ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। এরপর নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়ি নিয়ে গেলেও শুক্রবার রাত থেকে ফের বাড়তে থাকে শারীরিক সমস্যা, ব্যাপক হারে কমতে থাকে অক্সিজেন লেভেল ৷ ফলে শনিবার সকালে ফের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, শনিবার সকালে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় রোগীকে ভর্তি না নিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় তিন ঘন্টা ফেলে রাখা হয় হাসপাতালের বাইরে ৷ ফলে ক্রমশই রোগীর অক্সিজেন লেভেল ব্যাপক হারে কমে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থা তৈরি হলে, রোগীর পারিবারের কাকুতি মিনতিতে ICCU তে ভর্তি নেয় হাসপাতাল ৷ তার মাত্র কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় অরুণ রাণা নামে বছর ৫৪ এর ওই ব্যক্তির।
এরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহায়তা ও অব্যবস্থার বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতর ছেলে সৌরভ রাণা ৷ তার দাবি,স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে শুনে প্রথমে রোগীকে ভর্তি নিতে অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের তরফে নগদ টাকা বিল মেটানোর আশ্বাস দেওয়ায় অবশেষে ভর্তি নেওয়া হয়। হাসপাতালের চরম অব্যবস্থার জেরে নাজেহাল তিন ঘণ্টা প্রায় রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি, হাসপাতালের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার বলে অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাবার শেষকৃত্য সম্পন্নের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই মৃত রোগীর পুত্র সৌরভ রানা।
অন্যদিকে, ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, “রোগী নিয়ে আসার সাথে সাথেই আমরা রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে জানিয়ে দিয়েছিলাম, এখানে এই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, তাই অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, ওনারা নিজেদের দায়িত্বে রোগী ভর্তি করেছিলেন। আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করেছিলাম, তবু বাঁচানো যায়নি রোগীকে। রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।” রোগী মৃত্যুকে ঘিরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।