অসীম তালুকদার,এসপ্লাস নিউজ: অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যান না, তাহলে কম খরচ এ ঘুরে অসুন কালনা।
হাওড়া ও শিয়ালদহ দুজায়গা থেকেই কাটোয়া লোকালে চড়ে পৌঁছাতে পারেন এখানে। ব্যান্ডেল জংশন হয়ে রেলপথ। ব্যান্ডেল থেকেও ছাড়ে কিছু কাটোয়া যাবার ট্রেন। স্টেশন এর নাম অম্বিকা কালনা।
অতীতের বন্দরনগরী কালনায় ছিল বর্ধমান রাজাদের গ্রীষ্মাবাস। গঙ্গায় এক তীরে শান্তিপুর , বিপরীত তীরেই অম্বিকা কালনা। একাধারে বৈষ্ণব ও শাক্তধর্মের পীঠস্থান এই প্রাচীন জনপদটি।
কালনার বেশিরভাগ দ্রষ্টব্য কেন্দ্রীভূত ১০৮শিবমন্দির ও সংলগ্ন রাজবাড়ি এলাকায়। অম্বিকা কালনা স্টেশন থেকে এখানে আসতে গেলে মাথাপিছু ১০টাকা করে টোটোভাড়া লাগে।১০৮ শিবমন্দির ও রাজবাড়ি ছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি দেখতে গেলে আবার অটো রিজার্ভ করতে হয়। সব ঘুরেটুরে স্টেশনে ড্রপ করে দেয়।
★১০৮শিবমন্দির:- ১৮০৯ খ্রীঃ মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর এই ইঁটের তৈরি আটচালা মন্দিরগুলি নির্মাণ করেন। অভিনব সারিবিন্যাস! বাইরের বৃত্তাকার বড়ো সারিটি। এই সারিতে ৭৪টি মন্দির রয়েছে। একটি মন্দিরের ভিতরে সাদা পাথরের ও পরেরটাতেই কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। মন্দিরের সামনের দিকে পঙ্খ ও অল্পসল্প পোড়ামাটির কারুকাজ। সামনের বৃত্তাকার বাগানে মখমলি ঘাস ও ফুলের বর্ণবিলাস। ভিতরের ৩৪টি মন্দিরের ছোটো বৃত্তটি বড়ো বৃত্তটির কেন্দ্রস্থলে বসানো।
মন্দির চত্বরের কোনো অংশ থেকেই ১০৮টি মন্দির দৃষ্টিগোচর হয়না। সেটা দেখতে গেলে মন্দির চত্বরের বাইরের কোনো উঁচু বাড়িতে অনুমতি নিয়ে উঠতে হবে।
১০৮শিব মন্দিরের উত্তর প্রাচীরের বাইরে সাদামাটা টেরাকোটার কাজযুক্ত পঞ্চরত্ন জলেশ্বরশিবমন্দির।
★রাজবাড়ি কমপ্লেক্স:– ১০৮শিবমন্দিরের প্রবেশপথের ঠিক বিপরীতেই রাজবাড়ি কমপ্লেক্স এর প্রবেশপথ। সমস্ত কমপ্লেক্সটি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ভিতরে ঘাস ও ফুলের ঝাড়ের বুকচিরে বাঁধানো পায়ে চলা পথ চলেছে বিভিন্ন গন্তব্যের পানে। বাঁয়ে প্রথমেই ১টি কামান, সংলগ্ন #প্রতাপেশ্বর মন্দির:-মন্দিরটি রেখ দেউলের সুন্দর নিদর্শন। মন্দিরগাত্রে টেরাকোটার অনবদ্য কারুকাজ। উনবিংশ শতকে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিলো।
★রাসমঞ্চ– প্রতাপেশ্বর মন্দিরের পিছনের দিকেই ছাদবিহীন রাসমঞ্চটির অবস্থান।
রাসমঞ্চ থেকে খানিক সোজা এগিয়ে লালজী মন্দির।
★লালজী মন্দির– এই মন্দিরটি আলাদা প্রাকার বেষ্টিত প্রাঙ্গণে অবস্থিত। মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ১৭৩৯ খ্রীস্টাব্দে। মন্দিরের সামনেই রয়েছে নাটমন্দির। বহুরত্ন মন্দিরটির দেয়ালে সুন্দর টেরাকোটার কাজ। গর্ভমন্দিরে রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি। লালজী মন্দির সংলগ্ন প্রাকারের মধ্যেই পাহাড়ের আকৃতির
★গিরিগোবর্ধন মন্দির–বেশ অন্যরকম দেখতে।লালজী মন্দিরের প্রবেশপথে একটি কাঠের পালকি সাজিয়ে রাখা।
★কৃষ্ণচন্দ্রজী মন্দির—এটি রাজবাড়ি চত্বরের সবচেয়ে জমকালো মন্দির। অপূর্ব সুন্দর পোড়ামাটির কারুকার্যখচিত এই মন্দিরটি পঞ্চবিংশতি রত্নযুক্ত। উঁচু ভিত্তিমূলের উপর অবস্থিত এই মন্দিরটি ১৭৫১-৫৫ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত।মূলমন্দিরের সাথেই সংযুক্ত চালা। এটির পিলার ও প্রায় সমস্ত মন্দিরটির পোড়ামাটির ভাস্কর্যে অতুলনীয়।
★বিজয় বৈদ্যনাথ মন্দির– ইঁটের তৈরি আটচালা এই মন্দিরটির সামনে তিনখিলানযুক্ত প্রবেশপথ। পোড়ামাটির কারুকাজ। মন্দির অভ্যন্তরে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ।
★পাতালগঙ্গা– বাজারের কাছেই। খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই টলটলে জলের চতুষ্কোণ কুন্ড।কথিত-মাটির নীচে দিয়ে সুড়ঙ্গপথে গঙ্গায় সাথে সংযোগ রয়েছে। মাথায় ছাদযুক্ত বেশ বড়োসড়ো জায়গায় ছোটো ছোটো মন্দির তৈরির কাজ চলছে।
১.গোপালজী মন্দির -২৫টি চূড়াযুক্ত প্রকান্ড এই মন্দিরটি ১৭৬৬খ্রীস্টাব্দে নির্মিত। বাংলা চালারীতির ছাদে আচ্ছাদিত প্রলম্বিত বারান্দা। অপরূপ পোড়ামাটির কারুকার্য সমন্বিত মন্দিরগাত্র।
২.সিদ্ধেশ্বরী মন্দির-মূল মন্দিরটিতে সুন্দর পোড়ামাটির কারুকার্য। সঙ্গের অপেক্ষাকৃত ছোট মন্দিরগুলি উজ্জ্বল কমলা রং এ রঞ্জিত। বর্ধমান মহারাজ চিত্রসেনের তৈরি দেবী অম্বিকার এই মন্দির। এই দেবীর নাম থেকেই কালনার নাম হয়েছে অম্বিকা কালনা।
৩.ভবাপাগলা আশ্রমে-নাটমন্দিরের মতো অংশে ভবার বিভিন্ন ছবি, মূর্তি,ব্যবহার্য সামগ্রী,বানীর মাধ্যমে ভবার জীবনকাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। গর্ভমন্দিরে ভবার আরাধ্যা কালীমূর্তি। এখানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
এরপর স্টেশন ফিরতি পথে দেখে নিন-
★মহাপ্রভু মন্দির-উজ্জ্বল রঙে রঞ্জিত নাটমন্দির ও চালাধর্মী মন্দির। মন্দিরে ঢোকার গেটের দুদিকে পদ্মফুল ও অন্যান্য দেবতার মূর্তি। চালাধর্মী মন্দিরে অনেকগুলো কক্ষ।এক একটিতে এক একজন দেবতা অধিষ্ঠিত।কথিত মন্দিরের দরজা খোলা থাকলে দেবতারা মন্দির থেকে বেরিয়ে যান।– তাই এই মন্দিরে প্রায় সবসময়ই বন্ধ থাকে দরজা। নির্দিষ্ট সময় সময় দরজা খুলে ভক্তদের ঝলকদর্শনের ব্যবস্থা।
★ মহাপ্রভূ মন্দির- দূরেই সুপ্রাচীন তেঁতুল গাছের নীচে মহাপ্রভুর বিশ্রামস্থলের উপর ছোট্ট এক মন্দির।এখানে নাকি শ্রীচৈতন্যদেব বিশ্রাম নিয়েছিলেন।বিরাট এলাকা প্রাচীর ঘেরা।প্রাচীরের গায়ে শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সুন্দরভাবে চিত্রিত।
এরপর
★শ্যামসুন্দর বাড়ি- একদিকে একটি বাগান মধ্যের বাঁধানো জায়গার উপর নিত্যানন্দের বিবাহস্থলের উপর ছোটো মন্দির। অন্যদিকে নাটমন্দির ও সঙ্গে শ্যামসুন্দরে বাড়ি।